~ “সেই হাওয়া ঝামরে পড়ছে আজ...” ~
নিপবালা দাসীর ছড়ানো দোতলা বাড়ির
একতলায় ভাড়া থাকে সাহেবরা। একবার ভাড়ার বিলে যখন উনি সই করছিলেন, সাহেব ব’লে
ফ্যালে – “দাসী হবে না! ওটা দেবী হবে!” প্রবল চোখরাঙানির দরুন সাহেবকে জীবনে
দ্বিতীয়বার এপ্রসঙ্গে আগ্রহী দ্যাখা যায় নি।
নিপবালার পাঁচ মেয়ে। সাহেব-সহ বাড়ির
ছোটরা তাদের যথাক্রমে – মেই , দেই , লালা , জোন্না ও পুতা – এই নামে ডেকে থাকে।
এদের মধ্যে শেষ চার আইবুড়ো। প্রথমজন শ্বশুরবাড়ি ফেরৎ। পুতা এইচেস পাশ আর কিঞ্চিৎ
চকচকে ব’লে, সাহেবকে তার কাছে পড়তে পাঠানো হয়।
একটা স্কয়্যার খাতায় সাহেব মন দিয়ে
লিখেই চলেছে – বিশ্বাকর্মা পুজো সমান সমান মনখারাপ, বিশ্বকর্মা পুজো সমান সমান
মনখারাপ....
ঘুড়ি ওড়াতে পারে না ব’লে, বাড়িতে
ঘেরা ও ন্যাড়া দুটি ছাদ থাকা সত্বেও সাহেব এখন পুতাদের ঘরে।
একটু আগে মায়ের কিনে দেয়া রেডিমেড
মাঞ্জার সুতো লাটাই ও চারটে ঘুড়ি নিয়ে সাহেব বেশ সম্ভ্রান্ত ফিল করছিলো। তারপর পুতাদের
ঘরের জানলা দিয়ে সেগুলো ওড়াতে গিয়ে একটার পর একটা ছিঁড়ে ফেলেছে। দেয়ালে – কার্নিশে
ধাক্কা খেয়ে খেয়ে ঘুড়িগুলো অচেনা হয়ে গ্যাছে।
সাহেবের মুখোমুখি পুতাদের ব্ল্যাক
অ্যান্ড হোয়াইট টিভি। টিভি এখনও সুলভ হয় নি পাড়ায়। সাহেব মুখ গুঁজে লিখে চলেছে।
আচমকা, জানলার গরাদের ন্যূনতম ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়লো একটা কেটে আসা চাঁদিয়াল।
ডাকাবুকো এক হাওয়ার ঘাড় ধাক্কায়। আটকে থাকলো সাহেবের পিঠে। ঝড়ের স্নেহে। কিছুতেই খোলে না। লাফালেও না!
তবু লাফাতে লাফাতেই, বোতামখোলা হাসতে
থাকে সাহেব। চিৎকার ক’রে ব’লে ওঠে –
“ ভূত আমার পুত, পেত্নি আমার ঝি!
চাং লিং সু পিঠে আছে, ভয়টা আমার
কী!!”
~ সিপিএম যবে যাইবে দুনিয়া ছাড়ি-২ ~
(“শ্বাসের স্থান সাম্প্রতিক ঘাম
ফোটায় বিব্রত...”)
স্থানঃ রবীন্দ্রসদনের মাঠ,
রবীন্দ্রমূর্তির পাছার দিক।
চরিত্রঃ মহাদেব, হিমু, হারবার্ট
(মহাদেবের একপাশে হিমু। একপাশে
হারবার্ট। মহাদেব গাঁজা বানাচ্ছেন হিমু আর হারবার্টের জন্য। নিজে খাবেন না।)
হারবার্টঃ হিমুর লেখা একটা কবিতা
শুনবে?
মহাদেবঃ শোনা...
(হারবার্ট হিমুর লেখা একটা কবিতা
বলতে থাকে, যার শেষ চারটি লাইন এরকম...)
হারবার্টঃ ...তারচে ঘুমোই চলো,
বালিশেরা উত্তাপ শিখুক/ এই রাত, মায়ারাত, লাটিমের বিনিময়ে জেতা/ প্রসঙ্গপ্রয়াস
থেকে দু’কদম হেঁটে মনে হয়/ পৃথিবীর সব মেসো অসফল ঘড়িবিক্রেতা...
মহাদেবঃ (গাঁজা বানানো থামিয়ে) বাঃ!
শেষ লাইনটা শুনে প্রবীর দাশগুপ্তের ওই লাইনটার কথা মনে প’ড়ে যাচ্ছিলো...
হিমুঃ আমারও...
~ “বাল্ব খেতে পারে একটা লোক” ~
সূর্য ডুবিয়া গেলে ছাত্ররা বড়ো হইয়া
যায়। ভ্যানিশদাদুর ক্লাস শুরু হয়।
“আজ আমরা বাল্ব খাইবো...” – কালো
কাঠের চেয়ারে ভ্যানিশদাদু। সামনে বড়ো কাঠের টেবিল, যার চার পায়ার তলায় চারটি
গোলকচাকা লাগাইয়া রাখা। টেবিল ঘিরে ছোট ছোট মোড়ায় উৎপল, লিয়াকাত, সুনীল, ইন্দ্র,
কমল।
টেবিলের উপর একটি বাল্ব ও একটি রুমাল
রাখিলেন ভ্যানিশদাদু। রুমালের চারকোণ একত্রে ধরিলে যে ঝোলা উৎপন্ন হয়, তাতে
বাল্বটি ঢোকাইলেন। এইবারে কোণগুলিকে একসঙ্গে ধরিয়া ন্যুন-আছাড় মারা হইল টেবিলে।
রুমাল হাত-পা ছড়াইলে, দেখা যায়,
বাল্বের ভেঙে যাওয়া টুকরোদের। হোল্ডার – ফিলামেন্ট ও তৎসহ ধাতব কোষগুলি বাছিয়া
ভ্যানিশদাদু বেতের ঝুড়িতে ফেলিয়া দিলেন। অতঃপর, এক টুকরো কাচ মুখে পুরিয়া চিবাইতে
লাগিলেন। চিবাইতে চিবাইতে বলিলেন – খও... খও!
প্রথমেই মায়ামুগ্ধ উৎপল রুমাল থেকে
একটি টুকরো লইয়া মুখে পুরিল। তারপর একে একে সকলেই। শেষকালে লিয়াকাত।
বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে কাচগুলিতে আলো
না থাকিলেও, ভাঙিয়া যাইবার দরুন, সকল টুকরোয় খাঁজকাটা উজ্জ্বল পাথরের ন্যায় ঝিলঝিল
আলেয়া দেখা যাইতেছে।
এইভাবে ভ্যানিশদাদু, তার ছাত্রদের
লইয়া আসন্ধ্যে আলেয়া খাইলেন।
~ “স্নানের জলে লিখেছি ডাকনাম” ~
মনোরমা ইয়ারবুক খুব ইন্টারেস্টিং বই।
এর শেষ দিকের বেশ কয়েকটা পাতা জুড়ে প্রচুর অ্যাব্রিভিয়েশন লেখা থাকে। অ্যালফাবেট
ক্রমে। ইলেভেন টুয়েলভে খুব ঘাঁটতাম আর শুঁকতাম। (ওই সময়টা আমার মাথার ভেতর কুইজের
পোকা হাঁটাহাঁটি করতো)
যেমন- LASER শব্দের বর্ণগুলির ভাঁজ খুললে পাওয়া
যায়, সম্ভবত, লাইট অ্যামপ্লিফিকেশন বাই স্টিমুলেটেড এমিসন অফ রেডিয়েশন।
হিন্দি সিনেমার লম্বা নামগুলি ছোট
ক’রে নেওয়ার কেত প্রথম কবে প্রয়োগ হয়, তা নিয়ে ঋপণের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমার
যদ্দুর মনে পড়ে, আমি প্রথম শুনি QSQT (কেয়ামত সে কেয়ামত তক)...
যাদবপুরে, বেশিদিন হয়নি, নেশা ক’রে
নেশা নিয়ে গবেষণা করতে করতে বন্ধুদের কাছে একটি নতুন অ্যাব্রিভিয়েশন শিখেছি – N.A. – নার্কোটিক
অ্যানোনিমাস।
~ মাদারি বিকেল আসে দ্রিম দ্রিম
শব্দসহযোগে ~
টুকুন পড়ে সরস্বতী ইনস্টিটিউশনে।
হেডস্যার জ্যোতির্বিকাশ ঢাকনাখোলা কালিপেন বুকপকেটে পুরে, পকেটে অপরাজিতা ফোটান
দিনান্তে।
স্কুলের গেটে, টিফিনের সময় একজন
আচারওলা, একজন হাওয়াইমিঠাই বিক্রেতা আর একজন মাদারি আসেন।
সপ্তাখানেকের ভেতর ছাত্রদের প্রায় সব
ম্যাজিক দ্যাখাই ফুরিয়ে যায়। টুকুন এখনও আসে। একই ম্যাজিক রোজ দ্যাখে। একা একা।
নারকোলের খুলি দিয়ে বানানো তিনটে
বাটি আর চারপিস গোল গোল ঢিল দিয়ে মাদারি যে খ্যালাটা দ্যাখায়, সেটা আজ টুকুন ক’রে
দ্যাখালো মাদারিকে। তারপর বলল – ম্যাজিক শেখাবে?
ক্রমশ...